![](https://www.ukhiyanews.com/wp-content/uploads/All-WFP-food-assistance-provided-to-Rohingya-refugees-is-produced-in-Bangladesh.jpg)
: আমেরিকা ফার্স্ট নীতিকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিনেই প্রায় সব বৈদেশিক সহায়তা কর্মসূচি স্থগিত করার নির্বাহী আদেশ জারি করেন। এতে বাংলাদেশে ইউএসএআইডির সব ধরনের সহায়তা বন্ধ হয়ে যায়।
শুধু রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্য-সহায়তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত অন্য সব প্রকল্প ইতোমধ্যে বন্ধের ঘোষণা দিয়ে চিঠি দিয়েছে তাদের আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা (ইউএসএআইডি)।
এতে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে শুরু করেছে কক্সবাজারে টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ শরণার্থীর মধ্যে।
বাংলাদেশের শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনবিষয়ক কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ট্রাম্প সরকার আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর দেশটির অর্থায়নে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিচালিত বিভিন্ন প্রকল্পে ইতোমধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।
বিশেষ করে টেকনাফ ও উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গার জরুরি সেবা ইতোমধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, রোহিঙ্গা মানবিক সহায়তার জন্য বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে এসব জরুরি সেবায় অর্থায়ন করত যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রোহিঙ্গাদের জটিল রোগের চিকিৎসায় পরিচালিত পাঁচটি হাসপাতালের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়ন বন্ধের কারণে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত রোহিঙ্গাদের জটিল রোগের টিকাদান কার্যক্রমও বন্ধ হয়ে গেছে। এই কার্যক্রমের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নারী ও শিশুরা বেশি উপকৃত হতো।
এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা সংগ্রহ ও ব্যবস্থাপনার কাজও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে এটি বিকল্প উপায়ে অর্থাৎ স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে করার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অর্থায়ন বন্ধ করে দেওয়ায় সেভ দ্য চিলড্রেনসহ বিভিন্ন এনজিওর সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে রোহিঙ্গাদের জন্য একটি খারাপ সময় আসছে আগামী দিনগুলোতে।
এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধে মায়ানমার জান্তা সরকারের নির্যাতনে বাংলাদেশের টেকনাফ ও উখিয়ায় বিভিন্ন ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গা ইতোমধ্যে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে।
কারণ রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দেওয়া মোট বিদেশি অনুদানের বেশির ভাগই দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু এখন তারা রোহিঙ্গাদের জন্য শুধু খাদ্য-সহায়তা ছাড়া বাকি সব সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছে। এতে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবাসহ গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
সূত্র আরও জানায়, ২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তার জন্য মোট ৮৫২ দশমিক ৪ মিলিয়ন ডলারের চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেখানে বিদেশি সহায়তা এসেছিল ৫৪৮ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলার। রোহিঙ্গাদের জন্য মোট চাহিদার বিপরীতে মাত্র ৬৪ দশমিক ৪ শতাংশ বিদেশি সহায়তা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র একাই দিয়েছে ৩০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা মোট বিদেশি সহায়তার ৫৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, প্রায় ৫৫টি দেশ ও সংস্থা রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে।
২০২৪ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য মোট বিদেশি সহায়তার মধ্যে ইউরোপিয়ান কমিশনস হিউম্যানিটারিয়ান এইড অ্যান্ড সিভিল প্রটেকশন ডিপার্টমেন্ট দিয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, ইউরোপীয় কমিশন ৫ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়া দিয়েছে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়া ৩ দশমিক ৮ শতাংশ এবং জাপান দিয়েছে ২ দশমিক ২ শতাংশ। বাকি দেশগুলো দিয়েছে মোট সহায়তার এক ভাগেরও কম। ফলে মার্কিন সহায়তা ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মানবিক সংকট নিরসন করা কঠিন হবে বলে সূত্র জানায়।
উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতিবছরই বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রকল্পে ইউএসএআইডির মাধ্যমে সহায়তা হিসেবে অর্থায়ন করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে ২০২১ সালে ৫০০ মিলিয়ন ডলার, ২০২২ সালে ৪৭০ মিলিয়ন ডলার, ২০২৩ সালের ৪৯০ মিলিয়ন ডলার এবং ২০২৪ সালে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দিয়েছে, যার মধ্যে ৩০১ মিলিয়ন ডলার ছিল রোহিঙ্গাদের জন্য।
স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে নানাভাবে সহায়তা দিয়েছে দেশটি। রোহিঙ্গা সংকট শুরুর পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে বিপুল পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দিয়েছে। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ছিল বাংলাদেশও।
![](https://www.ukhiyanews.com/wp-content/uploads/add1.gif)
পাঠকের মতামত